সমস্ত লেখাগুলি

বিজ্ঞান ও ধর্ম -
শুভ্র সরকার
Nov. 24, 2024 | মুক্তমনা | views:5278 | likes:0 | share: 0 | comments:0

আপনি যে কাগজের উপর ছাপানো অর্থৎ বই আকারে আপনাদের কোরান, গীতা, বাইবেল পরেন সে বই, কাগজ, কালি, ছাপানোর ম্যাসিন, ছাপাখানাটি কে আবিষ্কার করেছে তা কি জানেন? 

কাগজ আবিষ্কার করেন চীনারা। খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ বছর আগে চীনারা কাগজ আবিষ্কার করে, সেই কাগজ সারাবিশ্বে রপ্তানি করতেন। আপনার ঐ ধর্মীয় পুস্তকটিতে সেই  কাগজই ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে কোন ঐশ্বরিক বস্তু এতে ব্যবহৃত হয়নি। তাই ধর্মগ্রন্থ নিজেই কি বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে প্রকাশিত হলোনা?

আপনি যে ধর্মগ্রন্থটি পড়ে এতসব ধর্মীয় নিয়ম নীতি আওরান, ঐ পুস্তক বা বইটি তৈরি হয়েছে একটি ছাপাখনায়। আর ছাপাখনাটিও বিজ্ঞানের অবদান। ঐ ছাপাখানা ও বই কে কে তৈরি করেছে জানেন?

১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির মেনাজ শহরে ছাপাখানা আবিষ্কার করেন গুটেনবার্গ। এবং ইংরেজি ভাষায় ইংল্যান্ডে প্রথম গ্রন্থ মুদ্রন করেন উইলিয়াম ক্যাক্সটন।

শুধু কাগজ আবিষ্কার, ছাপানোর যন্ত্র ও বই ছাপানোর ব্যবস্থা উদ্ভাবনেই কিন্তু আপনার ধর্মগ্রন্থটি তৈরি হয়ে যায়নি। এতে উপযুক্ত মানের কালিরও দরকার হয়েছে। আর উপযুক্ত মানের কালি মানে তৈলাক্ত কালি। যা ছাড়া আপনার বই ছাপালে সেই কালি অল্প ঘষাতেই উঠে যেত। তাই প্রথম তৈলাক্ত কালি তথা লিথোগ্রাফি প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন জার্মান অভিনেতা অ্যালোয়িস সেনেফেল্ডার। 

এবং এখানেই শেষ নয়। এই ছাপাখানা মানুষের চাহিদা মিটাতে পারছিলোনা। তাই এক সময় এই ছাপাখানাও অচল হয়ে যায় আধুনিক ছাপাখানার বদৌলতে। এটি করতে হয় মানুষের প্রয়োজনে। আর আধুনিক ছাপাখানা আবিষ্কার করেন ইংল্যান্ডের রবার্ট বাকলে।

এবার আশি একটু কলমের কথায়। কারন কলম ছাড়া আপনার আমার লেখা পড়া'র 'ল' ও হতোনা। মানুষের এ প্রয়োজন বুঝে কলম আবিষ্কার করেন ওয়াটার ম্যান। অবশ্য এটি ছিলো ফাউন্টেন পেন। কলমের পরেও আরেকটি জিনিসের প্রয়োজন মানুষ খুব বোধ করে। আর তা হলো পেন্সিল। আর পেন্সিল আবিষ্কার করেন রোমানরা। 

এবার আশি বলপয়েন্ট কলমের কথায়। যার প্রথম পেটেন্ট করেছিলেন জন জে. লাউডকে ১৮৮৮ সালের ৩০ অক্টোবর। আর বলপয়েন্ট পেন এখন সবার মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে ফাউন্টেন পেন আর দেখাই যায়না।

তাহলে এখানে আমরা কি দেখতে পাই? আপনার ধর্মপুস্তক বিজ্ঞানের কাছে প্রতিপদক্ষেপে ধরা খেয়ে বসে আছে। ধর্মপুস্তক পড়ার আগে বিজ্ঞানকে একশতবার প্রনাম করে আসতে হয় আপনাকে। কারন বই বানানোর এই এতোগুলো পদ্ধতির মধ্যে কোথাও কি কোন ধর্মান্ধদের হাত দেখতে পেলাম আমরা! কোথাও পাইনি। অথচ ধর্মান্ধরাই মানুষের জীবনকে বিভীষিকাময় করে রেখেছে আজীবন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মের জঞ্জাল জীবনকে এক পা এগুলে যেন একশত পা পিছনের দিকে ঠেলে দেয়। আর এই মানুষের প্রয়োজনে মানুষ যে আবিষ্কার গুলো করেছে সে আবিষ্কারগুলো ব্যবহার করেই তো ধর্মান্ধরা এখন তাদের তথাকথিত শিক্ষা দীক্ষা পরিচালনা করছে। এমনকি কেউ আছে বই, কাগজ, কলম, কালি ছাড়া তাদের শিক্ষা দীক্ষাকে একটুও এগিয়ে নিতে পারবে! তাহলে সবাইকেইতো বিজ্ঞানের কাছে নতজানু হতেই হয়। বিজ্ঞানের কাছে এত নতজানু হওয়ার পরেও যে মানুষেরা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার কথা বলে তারা যে কত বড় ধর্মীয় সেবক সেটা বুঝতে আর কারো কাছে কি যাওয়ার প্রয়োজন আছে! 

এবার ভাষার কথায় আশা যাক। ভাষার মাধ্যমে এই যে ভাবের বিনিময়, কথার আদান প্রদান, সেটাকে দেখা হয় বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবে। সবকিছুকে বদলে দিয়েছে এই ভাষা।

"জটিল যতো বিষয় আছে তার একটি এই ভাষা এবং এটিই আমাদের মানুষ বানিয়েছে, বলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব বিবর্তন বিভাগের শিক্ষক ও নৃবিজ্ঞানী রবার্ট ফোলি। তাই ভাষাতো আর কোন ঈশ্বর বানিয়েছে একথা কেউ বলেনি। ভাষাটি আবিষ্কার করা কোন ধর্ম প্রবর্তকের পক্ষে বহুবছর চেষ্টা করেও সম্ভব নয়। দু'একজন ওয়াজকারী অবশ্য এমন দাবিও করে বসেন মাঝে মধ্যে। আচ্ছা ভাষা যদি ঈশ্বর তৈরি করে দিয়ে না থাকে তাহলে সে কেমন ঈশ্বর যে আমাদের তৈরি ভাষায় উনাকে ডাকতে বলেন!

তাই এখন একথা বলাই যায় যে এইসব কিছু আবিস্কার হওয়ার পর ধর্ম প্রবর্তক বা প্রচারকেরা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন এসব তাদের বাপ-দাদাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আজ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি কারি এই মানুষগুলো শুধু গুজব ও গজব ছাড়া ভালো কিছুই আবিষ্কার করতে পারেনি।

এই গুজব ও গজবের আবিস্কারকরাই নিজেদের মহাজ্ঞানী ভাবে। 

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933